জমজমের পানি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পানি। পবিত্র জমজম নিয়ে রাসুল (সা.)-এর বহু হাদিস রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো ইবনে আব্বাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত।
মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পানি হলো জমজমের পানি। তাতে রয়েছে তৃপ্তির খাদ্য ও ব্যাধির আরোগ্য। ’ (আল-মুজামুল আউসাত, হাদিস : ৩৯১২)
জাপানের বিখ্যাত গবেষক মাসরু এমোতো জমজমের পানি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর মতে, জমজমের এক ফোঁটা পানির যে নিজস্ব খনিজ গুণাগুণ আছে, তা পৃথিবীর অন্য কোনো পানিতে নেই। তিনি আরো বলেন, সাধারণ পানির এক হাজার ফোঁটার সঙ্গে যদি জমজমের পানির এক ফোঁটা মেশানো হয়, তাহলে সেই মিশ্রণও জমজমের পানির মতো বিশুদ্ধ হয়। কেননা জমজমের পানির মতো বিশুদ্ধ পানি পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। খলিলুল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-এর পুত্র হজরত ইসমাঈল ও স্ত্রী হাজেরা (আ.)-এর এই স্মৃতিকে মহান আল্লাহ এতটাই বরকতময় করে রেখেছেন যে পৃথিবীতে এই পানির নজির আর তিনি রাখেননি। এই পানিকে তিনি বানিয়েছেন সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত এবং হাজারো জীবাণুর প্রতিষেধক। বর্তমানে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের ব্লাড প্লাটিলেট (রক্ত অণুচক্রিকা) কমে যায়। প্লাটিলেট হচ্ছে রক্তের এক ধরনের ক্ষুদ্র কণিকা বা অণুচক্রিকা, যা রক্ত জমাট বাঁধতে ও রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সাহায্য করে। একজন সুস্থ মানুষের রক্তে প্লাটিলেটের হার প্রতি ১০০ মিলিলিটারে দেড় লাখ থেকে চার লাখ থাকে। এই পরিমাপের চেয়ে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি দেখা দেয়। প্লাটিলেটের সংখ্যা ২০ হাজারের নিচে নেমে এলে কোনো প্রকার আঘাত ছাড়াই রক্তক্ষরণ হতে পারে।
কোনো কারণে রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলে জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার মাধ্যমেই প্লাটিলেটের সংখ্যা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। মহান আল্লাহ অনেক খাবার ও পানীয়র মধ্যেই রক্তের প্লাটিলেট বৃদ্ধির উপাদান রেখেছেন। জমজম কূপের পানিতেও রেখেছেন এমন কিছু বৈশিষ্ট্য, যা বিভিন্ন রোগ উপশমে সহায়ক। নিম্নে জমজমের পানির কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো—
এটি মানবকোষের শক্তি বৃদ্ধি করে : জার্মান বিজ্ঞানী নাট ফিফারের গবেষণা মতে, জমজমের পানি আশ্চর্যজনকভাবে দেহের সেল সিস্টেমের শক্তির মাত্রা বাড়িয়ে তোলে।
জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়ামুক্ত : বর্তমান বিশ্বে জমজম কূপ ছাড়া অন্য কোনো পানি ব্যাকটেরিয়ামুক্ত নয়। জমজম পানি বিশেষজ্ঞ ড. ইয়াহইয়া খোশগের মতে, জমজমের পানিতে কোনো দূষণকারী পদার্থ থাকে না। আলট্রাভায়োলেট রশ্মি দ্বারা পরীক্ষায় জমজমের পানিতে কোনো ধরনের দূষণকারী পদার্থ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সর্বোচ্চ বিশুদ্ধ : এটি পৃথিবীতে প্রাপ্ত পানিসমূহের মধ্যে সর্বাধিক বিশুদ্ধ। সাধারণত মানুষ ফ্রেঞ্চ আল্পসের পানিকে বিশ্বের সর্বাধিক বিশুদ্ধ পানি হিসেবে জানে। কিন্তু জমজমের পানি তার চেয়েও বিশুদ্ধ। এর প্রতি লিটারে বাইকার্বনেটের পরিমাণ ৩৬৬ মিলিগ্রাম, যেখানে ফ্রেঞ্চ আল্পসের পানির প্রতি লিটারে বাইকার্বনেটের পরিমাণ ৩৫৭ মিলিগ্রাম। এতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা রোগের নিরাময় হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি এতে ফ্লুরাইডের উপস্থিতি থাকায় তার জীবাণুনাশক ক্ষমতা আছে।
ব্লাড প্লাটিলেট বৃদ্ধি করে : জমজমের পানি ব্লাড প্লাটিলেট বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে : যেহেতু পানি পান করলে মানুষের ক্ষুধা দূর হয়, ফলে এটি ওজন কমাতে ইচ্ছুকদের জন্য ডায়েটের কাজে সাহায্য করতে পারে। তারা ওজন বৃদ্ধিকারী খাবার কমিয়ে দিয়ে জমজমের পানির মাধ্যমেও শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালরির অভাব পূরণ করতে পারে। নিয়মিত জমজমের পানি পান করলে রোগা ব্যক্তিদের ওজন বাড়াতেও সাহায্য করে এটি।
চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে : এই পবিত্র পানি চোখে ব্যবহার করলে চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায় এবং চোখের নানা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
গ্যাস্ট্রিক ও বুকজ্বলা দূর করে : এই পানির রাসায়নিক গঠন অ্যালকালাইন প্রকৃতির, যা শরীরের অতিরিক্ত এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। গ্যাস্ট্রিক, আলসার ও হৃদযন্ত্রে গঠিত বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই আমরা সবাই জমজমের পানি সংগ্রহে রাখতে পারি। অন্যকে উপহার দিতে পারি। সাহাবায়ে কেরাম ও পূর্বের মনীষীরা মেহমানকে জমজমের পানি উপহার দিতেন। বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদেরও আমরা বেশি বেশি জমজমের পবিত্র পানি পান করাতে পারি; যেহেতু মহান আল্লাহ এই বরকত পানিতে ব্লাড প্লাটিলেট বৃদ্ধির উপাদান দিয়ে দিয়েছেন। রাসুল (সা.)-এর ভাষায়ও এই পানিকে রোগ নিরাময়কারী বলা হয়েছে। আমরা জমজমের পানি সংগ্রহ করে তার সঙ্গে অন্য পানি মিশিয়েও সারা বছর রেখে দিতে পারি। কেননা জমজমের পানির সঙ্গে অন্য পানি মেশালে তার মধ্যে জমজমের পানির মতো গুণাগুণ চলে আসে। জাপানের বিখ্যাত গবেষক মাসরু এমোতো তা প্রমাণ করেছেন।
জমজমের পানি পানের নিয়ম
১. দাঁড়িয়ে পান করা
২. তিন শ্বাসে পান করা
৩. পানের সময় এই দোয়া পড়া
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিআ, ওয়া রিজকান ওয়াসিয়া, ওয়া শিফাআন মিন কুল্লি দা-ইন।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কল্যাণকর জ্ঞান, প্রশস্ত রিজিক এবং যাবতীয় রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করছি। ’ (দারাকুতনি : ৪৬৬)
এ ছাড়া ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে আমরা প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বনের পাশাপাশি কৃত পাপ থেকে তাওবা করতে পারি। কারণ আল্লাহর দরবারে তাওবা করলে তিনি আজাব তুলে নেন। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো কিছুই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তাই সব বিপদ থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহই একমাত্র ভরসা।