ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জ্বর। এডিস মশা দ্বারা ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস ছড়ায়। চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাস আছে। এগুলো হলো ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪। এর যে কোনো একটির সংক্রমণে আসলেই ডেঙ্গু জ্বর হয়।। ডেঙ্গু জ্বর দুই প্রকারের হয়। এর মধ্যে ক্লিনিক্যাল ডেঙ্গু মোটামুটি সহনশীল হলেও হেমোরেজিক ডেঙ্গু বা হেমোরেজিক ফিভার সবচেয়ে মারাত্মক।
অধিকাংশ সময় ডেঙ্গু জ্বরের কোনো প্রতিষেধক পাওয়া যায় না। লক্ষণ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়। অন্য ভাইরাল ফিভারের মতো এটিও নিজ থেকেই সাত দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর ভয়াবহ হতে পারে।
ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে, সাধারণত তীব্র জ্বর (১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত) এবং সেই সঙ্গে শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হওয়া। এ ছাড়াও মাথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হতে পারে। জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ৪ থেকে ৫ দিনের মাথায় সারা শরীরে লালচে দানা দেখা যায়, যাকে স্কিনর্যাশ বলে।
এটা অনেকটা অ্যালার্জি বা ঘামাচির মতো। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব এমনকি বমিও হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং খাবারে রুচি কমে যায়। এই অবস্থাটা অত্যন্ত জটিল হতে পারে, যেমন- অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পরা শুরু হতে পারে।
মেয়েদের ক্ষেত্রে, অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেক দিন পর্যন্ত রক্ত পড়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই রোগে অনেক ক্ষেত্রে বুকে বা পেটে পানি আসা, লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস, কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতাও দেখা দিতে পারে।
ডেঙ্গুর নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকলেও এসময় প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা, বিশ্রাম নেয়া এবং প্রচুর তরল খাবার খাওয়া জরুরী। জ্বর কমানোর জন্য কোনো মতেই প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য ওষুধ খাওয়া যাবে না। জ্বরের সঙ্গে রক্তক্ষরণের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড়ে বারবার শরীর মুছে দিতে হবে।
কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলি ডেঙ্গু প্রতিরোধে সহায়তা করে।
১. কমলায় প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ও ভিটামিন সি থাকে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। জ্বরের পরিমাণ বেশি হলে রোগীকে কমলা খেতে দিন। এতে জ্বর কমার সঙ্গে সঙ্গে হজমশক্তিও বাড়বে।
২. পেঁপে বিভিন্ন রোগ সারাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁপের বীজ মশার কামড় থেকে সৃষ্ট রোগ সারায়। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁপে ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট বাড়াতে দ্রæত কাজ করে। এছাড়া পেঁপের পাতা প্রতিদিন দুইবার রস করে খেলে তা ডেঙ্গু জ্বর সারাতে ভূমিকা রাখে।
৩. ডেঙ্গু জ্বর হলে সাধারণত পেটে সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে এই সময় তৈলাক্ত ও ঝাল জাতীয় কোন খাবার খাওয়া ঠিক নয়।
৪. হারবাল চা ডেঙ্গু জ্বরের ঝুঁকি কমায়। এ কারণে জ্বর হলে দারুচিনি, লবঙ্গ, আদা দিয়ে চা পান করুন।
৫. ডেঙ্গু হলে পানিশূণ্যতা দেখা দেয়। এই সময় ডাবের পানি শরীরের পানিশূণ্যতা দূর করে। সেই সঙ্গে শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৬. ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি যেমন, গাজর, শসা এবং অন্যান্য সবুজ শাকের জুস করে খেতে পারেন। এসব শাকসবজিতে থাকা প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৭. ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে তরল খাবার বিশেষ করে স্যুপ খেতে দিন। এটা ক্ষুধা বাড়াবে এবং অস্থিসন্ধির ব্যথা কমাবে।
৮. ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দারুন কার্যকরী। এ কারণে ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন- কমলা, আনারস, স্ট্রবেরী, পেয়ারা এসব ফল বা ফলের জুস খেতে দিন। এ ধরনের জুস ভাইরাল সংক্রমণ সারাতে সাহায্য করবে।
৯. ডেঙ্গু জ্বর সারাতে নিমপাতার রসও খুব কার্যকরী।
তবে ডেঙ্গু থেকে বাঁচার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে সাবধান থাকা। কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে এ রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব অনেকাংশে। যেমন,
১. সাধারণত সূর্যোদয়ের আধাঘণ্টার মধ্যে এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের আধাঘণ্টা আগে এডিস মশা কামড়াতে বেশি পছন্দ করে। এই দুই
২. সময়ে মশার কামড় থেকে নিজেদের সাবধান থাকতে হবে।
৩. মশার বংশ ধ্বংস করতে তাদের আবাসস্থল দূর করতে হবে।
৪. পরিত্যাক্ত পাত্রে, ডাবের খোলা, ফেলে রাখা টায়ার, ফুলের টবে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করতে হবে।
৫. দিনের বেলাতেও ঘুমাতে হলে মশারি টাঙিয়ে নেয়া উচিৎ।
৬. ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে মশারির মধ্যে রাখা শ্রেয়। কারণ এসব রোগীকে কোনো স্বাভাবিক এডিস মশা কামড় দিলে সেই মশাটিও ডেঙ্গুর জীবাণু বাহক হয়ে পড়বে। সেই মশাটি আবার সুস্থ কোনো ব্যক্তিকে কামড় দিলে সুস্থ ব্যক্তিটিও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবে।