ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সারা দেশেই বাড়ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নানা পদক্ষেপের পরও অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না।
সরকারি হিসাবে গেল ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৮৪৭ জন।
হঠাৎ করে উপদ্রপ বেড়ে যাওয়ায় মৃত্যুর আহাজারিতে ভারী হচ্ছে আকাশ-বাতাস। শুধু বাংলাদেশই কেন, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশেই মশা আতংক এক মহামারী আকার ধারণ করেছে।
মশাবাহিত এক ভাইরাস সংক্রমণের আতংক যখন ঝেঁকে বসেছে মানবজাতির মধ্যে, ঠিক তখনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে আরেক অশনি সংকেত পাওয়া গেলো। মার্কিন বার্তা সংস্থা ‘সিএনএন’ জানায়, ইস্টার্ন ইকুইন এনসেফালাইটিস (ইইই) নামে পরিচিত একটি মশাবাহিত ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা দিয়েছে ফ্লোরিডার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
অরেঞ্জ কাউন্টির ফ্লোরিডা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বৃহস্পতিবারে (২৫ জুলাই) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরীক্ষাধীন অবস্থায় থাকা বেশ কয়েকটি মুরগীর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে ইইইভি ইতিবাচক উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা সংক্রামিত মশার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এর ফলে মানুষের মস্তিষ্ক সংক্রমিত হতে এবং ফুলে যেতে পারে।
পরীক্ষাধীন মুরগিগুলোর মাংসে ওয়েস্ট নেইল ভাইরাস এবং ইইই-এর উপস্থিতি জানতে নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়। তাদের রক্ত থেকে রোগগুলোর উপস্থিতি জানা যায়। তবে, এই প্রাণীটির শরীরে এমন ভাইরাসের প্রভাব না পরলেও মানুষের শরীরে তীব্র প্রভাব পরে।
অরেঞ্জ কাউন্টিতে পরীক্ষাধীন মুরগীর মাংস পরীক্ষায় ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পরে মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগ ‘মানুষের মধ্যে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ার’ কথা নিশ্চিত। মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রগুলো (সিডিসি) জানিয়েছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর মানুষের মধ্যে ইইই ভাইরাস আক্রান্তের মাত্র সাতটি প্রতিবেদন পাওয়া যেতো। যা এখন বাড়ছে।’
মুরগীর পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল পাওয়াতে এই রোগ মারাত্মক হতে পারে বলে সতর্ক করেছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ। সিডিসির মতে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া মানুষের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই মারা যায়। আর যারা বেঁচে থাকেন তাদের অনেকেরই সারাজীবন স্নায়ুতান্ত্রিক বা স্নায়বিক সমস্যা নিয়ে বাঁচতে হয়।
এই রোগের লক্ষণ ও উপশম কী?
ইইই ভাইরাসবাহী মশার কামড়ের ৪-১০ দিনের মধ্যে মানুষের শরীরে এই রোগের লক্ষণগুলি তৈরি করে বলে সিডিসি জানায়। আক্রান্ত মানুষের মধ্যে ডেঙ্গুর মতোই লক্ষণ গুলো দেখা দেয়। প্রথমে মাথা ব্যথা, অত্যধিক জ্বর, শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায় এবং বমি হয়। অবস্থা বেগতিক হলে কোন কোন ক্ষেত্রে ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মধ্যে অস্থিরত্ব দেখা দেয়, খিঁচুনি উঠতে পারে এবং এমনকি কেউ কেউ কোমায় চলে যেতে পারে।
পুরো গ্রীষ্মজুড়ে মশা জনবহুল এলাকার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এডিস মশার মতো এই মশাও বাড়ির আশেপাশের নর্দমা, কিংবা পরিত্যক্ত জলাশয়ে জন্মায়। কর্তৃপক্ষ এই সময়টাতে মানুষকে মশার কামড় খাওয়া থেকে দূরে থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন। মুখ ও শরীরের অন্যান্য অংশ কাপড়ে ঢেকে রাখতে হবে এবং ঘরের দরজা জানালায় ভাল করে পর্দা দিয়ে আটকে রাখাতে হবে। আটলান্টিক ও গালফ সাগরের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ইইই ভাইরাস পরিচিত এক রোগ।
এমন ভাইরাস আক্রান্তের কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিস্কার হয়নি। সিডিসি বলেছে, ‘অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসগুলির বিরুদ্ধে কার্যকর নয় এবং কার্যকর কোনও অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধও আবিষ্কার হয়নি। মারাত্মক অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে কিছু সহায়ক থেরাপির মাধ্যমে চিকিত্সা দেয়া হয়, যার মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি, শ্বাসযন্ত্রের সহায়তা, আইভি তরল এবং অন্যান্য সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। – সময়ের কণ্ঠস্বর